মেহেরুন, প্রিয়তম ফুল-কে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়—কোন বিশেষণে অভিহিত করা হলে এই ‘প্রিয়তম ফুল’ হয়ে উঠতে পারে আরও প্রিয়, আরও কাছে—একদম চিবুকের নিকটবর্তী। আমি বলতে পারছি না৷ মেহেরুন যে কোনো নির্দিষ্ট নারী নয় বা আমার জীবনে এমন কোনো নারী বাস্তবিকভাবেই এসেছিল কি না, সে প্রসঙ্গ অবান্তর। যেন অলক্ত পায়ে হেঁটে যাওয়া নববধূর মতো কিছুটা সংকোচে পড়ে গেছি আমি। সেজন্যই বলেছি—
মেহেরুন নেসা কোনো নির্দিষ্ট নারীর নাম নয়। আমার প্রতিজন নতুন প্রেমিকার নাম-ই মেহেরুন। কিন্তু, আমি যাকে এই অব্দি প্রিয়তম মেহেরুন জেনে এসেছি—সে আমার হয়নি, হয়েছে রৌদ্রদগ্ধ দুপুরবেলার৷ হয়েছে সন্ধ্যার বিবর্ণ আকাশের। এক এক করে কত বেলা গড়িয়ে গেল—কাঙ্ক্ষিত ফুল আর ফুটে এলো না। যেন আমার মনের ভেতর তুমুল অসুখ জড়িয়ে আছে। পৃথিবীতে যে যা চেয়েছে—তা-ই পেয়েছে, শুধু আমি পাইনি। কেননা, আমার মন চড়ুই পাখির মতো চিঁচিঁ শব্দ করে উড়ে বেড়ায় এখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে এখানে।
একদিন, কতক সম্ভাব্য সহজতম উপায়ে খুব চেয়েছিলাম, তুমি আমার হও—আমি তোমার হই। অথচ, সবকিছু বদলে গেল। কি থেকে কি হয়ে গেল, আমার জানা নেই। কারণ, সমাজ বিবর্তনের প্রবর্তক তো আমি নই—মূর্খপাণ্ডারা। সবকিছু নিজের মতো হয় না—অদৃশ্য মিথের মতো চেপে যায়, যা ভেবে বসে থাকি একা। যদিও আমার একটা পথ ছিল—আমার একটা ভাবনার জগত ছিল—আজ আর কিছুই নেই। প্রসূত বৃক্ষের মতো পরিবর্ধিত আমার মন। যেখানে কোনোকিছুরই স্থায়িত্ব নেই, সেখানে মনের কি কথা’।
আবার যখন খুব আনমনা বসে থাকি—তখন এভাবে লিখে রাখি:
‘এক গভীর অভিনিবেশে চেয়ে আছি দুপুরের উদাসীন হাওয়ায়, মনের ভেলায় ভাসমান তারাপথ। সে আমার প্রতিবেশী হয়ে গেছে বহুদিন, একটি সোনালি আলোক রেখা প্রতিদিন পুবের সূর্য আমার জানলা ছুঁয়ে যায়। তখন তাহার কথা মনে পড়ে। তথাপি, সেই যে ভেঙেচুরে গেল জীবন—তা আর ফিরে আসে না, পুরোটা সময় কেবল অনিঃশেষ অন্ধকারে প’ড়ে থাকি, নির্মোহ মগ্নতার খাদজুড়ে অথইজল’।
এই বইয়ে সংকলিত আঠরোটি গদ্য—প্রতিটির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খুঁজতে গেলে পাঠক আশাহত হতে পারেন—কেননা, প্রতিটি গদ্যেই জীবনবোধ, আদর্শিক জীবন-যাপনের রূপরেখা, প্রেমিকার চুলের ঘ্রাণ, ব্যর্থ প্রেমিকের দুঃখবোধ, বাদল দিনের তুমুল স্মৃতিকাতরতা। অথবা, মেহেরুন নেসা-কে হারিয়ে আবারও খুঁজে পাওয়া। এইসব বিভেদ সংজ্ঞা আর উপসংহারের মধ্য দিয়েই ‘মেহেরুন, প্রিয়তম ফুল’ এর অভিযাত্রা। আমার অন্যান্য গদ্যের চেয়ে এখানের গদ্যগুলো নিঃসন্দেহে মনোরম। এ আমাকে বেশ আনন্দ দিয়েছে।
বইটি প্রকাশ করছে ‘চন্দ্রবিন্দু’ প্রকাশন। অক্টোবরের শেষের দিকে বাজারে আসছে ‘মেহেরুন, প্রিয়তম ফুল’।