অন্ধকার, রহস্য, ঝরা পালক
নৌকাচোখে বারুদ ধরেছি
নাক থেকে খুলে ফেলে লজ্জার পিছুটান
আলোর শেকড়ে দিয়েছি বাতাসের স্রোত…
এইতো! এখানেই পড়ে আছে
সহস্র রহস্যের ঝরা পালক
আপাতত এখানেই রেখে যাব শেষতম দীর্ঘশ্বাস
আর হাতে-হাতে বাঁচাব রাত্রির ঘুম
প্রহরীর সস্তা আবেগ
রাতের প্রান্তিকে মুঠোভর্তি চাপা চাপা
মৃত্যুর লোভ নিয়ে ফেরার পথে খুঁজব
ফেরারী সান্ত্বনা—
ও গাঙের শঙ্খচিল, এতো ওড়াউড়ি এতো জল খলবল…
এসবের মাহাত্ম কেবল ধারিত,
জানে উপকূলের শিকারী চোখ
আমার জন্য জেগে আছে
……………… অন্ধকার
……………… ……… রহস্য
……………… …………… ঝরা পালক!
চুল
[চেতনা-কে]
তোমার চুলের সাথেই আমার তাবৎ শত্রুতা
যেন ফসলের জন্য বৃষ্টির চূড়ান্ত আস্ফালন
মনে হয় তুমি রাত্রিমুখর বর্ষা
আকাশে শুকাচ্ছো চুল
আর তোমার চুল থেকে ঝরে যাচ্ছে
রিমঝিম শব্দের সুরা
পার্শ্বদৃশ্যে কাঁপছে বন, বর্ণালী হাওয়া—
এবং ঋষিমনে ব্রতভঙ্গের প্ররোচনা
শুনেছি চুলের গায়ে বিয়েচিত্র আঁকা হলে
তাতে নাকি জট বাঁধার সম্ভাবনা কম থাকে!
যুগল-জীবন
যতটা আগুন ছিল তার’চে বেশি ছিল মেকী উত্তাপের উন্মাদনা। প্রকৃত আলোর সংকলন হলে এবার চড়ুইপত্রে বিলি হতো বিনিময়ের বাৎসরিক বিজ্ঞাপন। জীবনপাঠ্যের সূচি থেকে ছয় বছরের বয়সপাঠ শেষ হলেও— কুয়াশার পর্দা ডিঙিয়ে এখনো হাসেনি গৃহবাসী রোদ।
এইসব বহুমুখী ভাবনার শীতে প্রায়ই পরাজিত কম্পমান ভোর। আর প্রতিটি শীতবাক্য যেন মৌনমুগ্ধ মৌমাছি— উৎস থেকে দুই হাত দূরত্ব মাপতে শেখেনি।
প্রতিক্ষণ আমরা বুকের প্রতিবেশি, পাশাপাশি; প্রতিপর্বে নিঃসঙ্গ।
প্রতিদিনই আমরা একহাত পার্থক্যে লক্ষ যোজন দূরত্ব রচনা করি!
প্রেম, খসড়া চিঠি
আমার জড়তা নাই আছে সিম্ফনী
মহাকাল ভেদ করা উষ্ণতার প্রতিধ্বনী
তাপিত শিল্পের ঠাকুরবাড়িতে আমাকে তবু পাওয়া যাবে না
সেখানে শুধুই বর্ষণের মন্ত্রপাঠ
আমার ডানায় লেগে আছে গতিশীল চেতনার ধুসর পালক
আর পরতে পরতে জমেছে অসংখ্য বিরহের আলোনামা।
আমার চোখের দিকে চেয়ে চেয়ে এখনো
খাঁচার স্বপ্ন কুড়ায় উদভ্রান্ত পাখিদের দল এবং
পরিবারতন্ত্রে তারা গড়ে তোলে বিভিন্ন সম্মোধন—
আমার মন নাই গো
আমার দেহ নাই!
যাত্রা
আহা! পুরাতন অক্ষরের সত্যতা ধরে বেঁচে আছ।
যেদিন প্রথম সভ্যতার অসভ্য বাতাস তোমাকে দিয়েছিল স্বপ্নভঙ্গের করুণ ব্যঞ্জনা— সুশীলতা মানি; তবু বিপরীত বূহ্যভেদে আমাকেই স্কুলপাঠ্যে মুখস্থ ছড়ার মতো মনে পরে রক্তাভ আলপনায়।
হঠাৎ তাঁবুর ভেতরে আবহ সংগীত বেজে উঠবে। একটি মাত্র উন্মাতাল ঢেউয়ের দিকে সমূহ দৃষ্টিপাত বিকিরণের মন্ত্রে দিক্ষিত হবে। আর আমি খণ্ড খণ্ড অংশের ছায়া কিনে বৃষ্টিপাতের স্বস্তি নিয়ে ফিরে যাব প্রতিবিম্বের হাত ধরে। এই হলো নিয়মের নির্দিষ্টতা।
তবু আমি জানি, বৃষ্টিপাতের প্রত্যক্ষ পূর্বরাগ তুমি। ভেতরে তোমার স্রোতস্বিনী মেঘের নিনাদ। নিদ্রার চাদরে লুকানো একা এক আহত শিৎকার।
কোথায় উৎস বলো! গন্তব্য কোন পাহাড়ের ঢাল!
জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুরে, মামাবাড়িতে। পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলার ধুনটে। চারুকলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। প্রকাশিত বই : অব্যক্ত সন্ধির দিকে [কবিতা; চৈতন্য, ২০১৫], এসো বটগাছ [না-কবিতা; চৈতন্য, ২০১৭], শ্রীদেবী অপেরা [কবিতা, তবুও প্রয়াস, কলকাতা, ২০১৯], অবিরাম বিস্মরণ [কবিতা, বৈভব, ২০২৩] এবং সম্পাদিত বই শতবর্ষে সত্যজিৎ [শ্রী, ডিসেম্বর ২০২১]। কলকাতা থেকে পেয়েছেন ‘আদম সম্মাননা-২০১৭’। সম্পাদনা করেন ওয়েবম্যাগাজিন ‘শ্রী’।