মাথা খুলে রাখা টিউবওয়েল
বাড়ি ফিরি অনেক রাতে
মহল্লার মুখে মাথা খুলে রাখা টিউবওয়েল
নিঃশব্দে বলে ফিরলে তাহলে!
ঘুম আসে না, এটা-ওটা চিন্তা করি
গুমোট গরমের রাতে
শাদা শাদা মেঘ নেমে আসে
ওই মাথা খোলা চাপ কলের ওপর
শেষ রাতের আধো স্বপ্নে দেখা যায়
ঝরঝর করে পানি পড়ছে কলতলায়!
সমুদ্রের রূপকথা
কাটালতাজড়ানো একটা পিলার
দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার শেষ মাথায়
পিলারটা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
অস্পষ্ট অসীমের দিকে
সন্ধ্যার আগে ওই পিলারের ওপর ভেঙে পড়ে,
উড়ন্ত পাখিদের কলকাকলি
আর আমি গালে হাত রেখে ভাবি সৈকতে এসে
রাস্তা শেষ হয় সমুদ্রের রূপকথা শুরু হবে বলে!
জীবনের টানে
খুনিরা আনন্দ পায় রক্তপাতে
খুন হওয়া মানুষের অন্তিম মিনতি শুনে
পাথরও নড়ে ওঠে অন্ধকারে,
কিন্তু খুনিরা অনড়…
যারা খুনি হতে পারে না তারাও তো
নির্মমতার ভেতর থেকে চাপা হাসি
বের করে আনে
বিষ পিঁপড়ার গর্তে পাখাছেড়া ফড়িং
ফেলে দিয়ে দেখেছি তামাশা!
ওরা পরস্পর কীভাবে বাঁচতে চায়
জীবনের টানে!
বই
বই তো লেখা হয় মাথার ভেতর
কাগজে যা লিখি তা আসলে
বইয়ের চেহারা
বইয়ের প্রকৃত পাঠ হয় চোখ বন্ধ করে
প্রতিটি পাঠের তরতাজা স্মৃতি
আমাকে ভাবাতুর করে বারবার
বই সে সময় টেবিল থেকে
তাকিয়ে থাকে আমার দিকে
সে তখন আমাকেই পড়ে!
ব্রিজ
মোলায়েম বৃষ্টি পতনের ভেতর
ব্রিজ পার হয়ে যাই
আমি মাথা গরম করে দেয়া রোদের ভেতর
ব্রিজ পার হয়ে যাই
অসুখে বিসুখে ঠাসা বসন্তের ভেতর
পাতা আছে আরেকটা ব্রিজ
ওই কংক্রিটের স্থাপনা পার হওয়ার পর
আমি কিছুটা বদলাই ভেতরে ভেতরে
প্রতিটা ব্রিজ আমাকে মনে করিয়ে দেয়
জীবনের অমোঘ বিচ্ছেদ!
কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধি ও অনুবাদক। জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৬১, নতুন অনন্তপুর, উলিপুর, কুড়িগ্রাম। বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ : বিষণ্ন জ্যোৎস্নার আকুতি (কবিতা), আবহমান উলুধ্বনি (কবিতা), নিভৃতিচর্চা (কবিতা), কাচপোকার ঘূর্ণিদৃশ্য (কবিতা), দূরবীনের ভিতর দিয়ে (ছোটোগল্প), বেগুনি আগুন (ছোটোগল্প), সাহিত্যের স্বদেশ ও বিশ্ব (প্রবন্ধ), দশকের বৃত্ত পেরিয়ে ও অন্যান্য প্রবন্ধ (প্রবন্ধ)।