হাইকের স্মৃতি
পাইনবনে বৃষ্টি ছিল, ভিজতেছিল পাতা
পাহাড়ি এক বনাঞ্চলে তোমার সাথে দেখা।
কথার কথা বলতেছিলা, হাইকে তুমি একা
পর্বতের স্বরূপ নিয়ে দিলাম আমি দেখা।
পর্বতের যে গ্লেসিয়ার ভেঙে সৃষ্টি হলো নদী
আমার একা হাঁটার পথে তেমন তুমি নাকি!
কোথায় তুমি বইবে আর, আমিই কত দূর
না জেনেই তো সঙ্গী তবু আমরা দুটি লোক।
কত যে বাঁক দিলাম পাড়ি, কত যে ঢালু পথ
ব্যাকগ্রাউন্ডে পাথরের বাজতেছিল সুর।
দু’পাহাড়ের মাঝখানে সাসপেনশন ব্রিজ,
বরফ গলা নদীর বুকে তোমার হাসি ফুল।
পথের মাঝে তোমার দেখা বিলীন হলো পথে
সানবার্নের ক্ষত তো নও, যাবে তুমি মুছে!
ফরিয়াদ
কথা ছিল মৃত্যু হবে পাহাড়ের বুকে
নিজভূমি ছেড়ে হাঁটি উঁচু-নিচু পথে ।
কত ঝিরি বয়ে গেছে পাহাড়ে নিভৃতে
গান শুনি সে সবের বিশ্রামের ফাঁকে।
ধীরে ধীরে বয়ে ঝিরি নদী খুঁজে পায়
নদীর শরীরে লেখা বলো কার নাম?
তার তরে বারেবারে জানায়া সেলাম
লুকিয়ে হৃদয়ে প্রেম অরণ্য হারায়।
যা কিছু হারায় সব হারিয়েই যাক,
ফিরে ফিরে না আসুক কোনো স্মৃতি তার।
সেখানেই শুরু, শেষ যেখানে পাহাড়
ক্ষতচিহ্ন মুছে গেলে জীবন ফুরাক।
ও মাবুদ, ও মাবুদ করি ফরিয়াদ—
পাহাড়েই মৃত্যু যেন প্রতি জন্মে পাই
নির্বাণ
সে তো দিক ভোলা এক, সে যে অন্ধ পথিক।
কেটে যাচ্ছে যে তার, কত পর্বতে রাত।
ছুটে যাচ্ছে কেবল, যদি পায় খুঁজে ঠাঁয়।
যেথা নাই কোনো আর পরিচিত কোনো মুখ।
পাথরের বহু পথ শেষে থামবে কোথায়?
জানা নাই কিছু তার, সাথে নাই ম্যাপটাও!
কালী গান্ধকী পাড় ঘেঁষে লুবরা ভিলেজ
সেথা নাই কোনো আর পরিচিত কোনো মুখ।
নববধূ
কোহেলিয়া নদী জানে কে যে ছিলে তুমি,
আমিই’বা ছিলাম কে জানে বাঁকখালী।
জেটিঘাটে দেখা আর বোটে পরিচয়
পাহাড়ের ঢালে হলো মন বিনিময়।
আদিনাথ মেলা থেকে লাল সুতো কিনে
ভালোবেসে বেঁধেছিলে বোধিবৃক্ষ ডালে।
আল্লাহর জমিনের প্রতি ইঞ্চি জুড়ে
আমাদের প্রেম ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
ঘটিভাঙা ব্রিজতলে তবু এই প্রেম,
কাদাজলে মিশে হলো সাগরে বিলীন।
কত রাত, কত দিন, কত যে সময়
সাগরের ফেনা হয়ে ভেসেছি দু’জন।
আজ আমি যাযাবর, তুমি নববধূ
বাসরের রাতে কাঁদো কার তরে তবু
বিবাহের গান
কোকিলের গলা জুড়ে বিবাহের গান
ধরাধামে এলো বুঝি বসন্ত আবার।
চিঠিপত্র ছিল কিছু বাড়িতে আমার
খুলে দেখি নেই আর রেশ বেদনার।
চিঠি থেকে উড়ে গিয়ে রাশি রাশি দুঃখ
আঙিনায় ফুল হয়ে ফুটে আছে যেনো।
বহু দিকে হাঁটা পায়ে আলতার রঙ
মুছে গেছে ক্ষত যত, পথের কথন।
টেলিপ্যাথি জুড়ে বাজে কত কিছু আজ
তোলা থাক যতটুকু প্রেম ছিল তাঁর।
পরিযায়ী পাখি আমি বারোমাসি দেশে
শীতশেষে বাড়ি ফিরি স্মৃতি বুকে নিয়ে।
মাতম নয় রে কোনো, বলি প্রার্থনায়—
সংসারের ধ্যানে যেন মন থাকে তাঁর।
৩০ শে জুন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জন্ম। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ‘মৌন শব্দগুচ্ছ’ তাঁর প্রথম কবিতার বই। দ্বিতীয় ও সর্বশেষ কবিতার বই ‘ঈশ্বরগঞ্জ’ প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের অক্টোবরে।